পোর্ট এলিজাবেথ। ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার বাইরে প্রথম টেস্ট ভেন্যু। যেখানে স্বাগতিক দেশের সঙ্গে প্রকৃতিও বিরাট চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় অতিথি দলকে।
১৩৩ বছরের পুরোনো স্টেডিয়ামটি সমুদ্রপাড়ের খুব কাছেই। সমুদ্রের তীব্র বাতায় বয়ে যায় মাঠের ভেতরে। যাকে বলা হয়, উইন্ডো টানেল। দুপুর ১২ থেকে ২টা পর্যন্ত প্রবল বাতাস থাকে। বিকেলে স্কোরবোর্ডের দিক থেকে ৪০-৪৫ কিলোমিটার বেগে বাতাস আসে। বিরুদ্ধ এই বাতাস এবং প্রোটিয়াদের বিপক্ষে অজেয়কে জয় করার লক্ষ্যে শুক্রবার মাঠে নামছে মুমিনুল অ্যান্ড কোং।
১৮৭৭ সালে প্রথম টেস্টসহ পরের টানা ৩০ টেস্ট হয়েছে অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ডের মাটিতে। টেস্ট ইতিহাসের ৩১তম ম্যাচটি খেলেছিল ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। আর ম্যাচটি হয়েছিল পোর্ট এলিজাবেথে। যেটির এখন নাম সেন্ট জর্জ পার্ক। ১৮৮৯ সালে অনুষ্ঠিত হওয়া ম্যাচটা প্রোটিয়ারা হেরেছিল ৮ উইকেটে। ঐতিহ্যবাহী মাঠে প্রথমবার নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
দক্ষিণ আফ্রিকায় এর আগে ৭ টেস্টের ৫টিতেই ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ। যে দুটিতে রান ব্যবধানে হেরেছে তার একটি ৩০৩ রানে, অপরটি ২২০ রানে। ডারবানে সবশেষ ২২০ রানের পরাজয় এখনো তরতাজা। চারদিন লড়াইয়ে টিকে থেকেও শেষ দিনে স্রেফ উড়ে যায় বাংলাদেশ।
২৬৭ রানের লক্ষ্য তাড়ায় মাত্র ৫৩ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। নিকট অতীতে এতো বাজে পারফরম্যান্স কখনোই করেনি বাংলাদেশ। সেসব পেছনে ফেলে বাংলাদেশ এখন সামনে তাকিয়ে। পোর্ট এলিজাবেথে জয়ে চোখ রেখেই মাঠে নামতে যাচ্ছেন মুমিনুল।
ম্যাচের আগে বেশ আত্মবিশ্বাসী মনে হলো অধিনায়ককে, ‘অবশ্যই আমি জেতার জন্য খেলব। প্রতি সেশন শতভাগ দিয়ে খেলব। আমরা যদি খুব বেশি অন্য বিষয়ে কান দেই, বাইরে কী হচ্ছে না হবে বা আগের ম্যাচে কী হয়েছে, সেসব চিন্তা না করে ১৫ সেশন, অন্তত ১২-১৩ সেশন যেন নিয়ন্ত্রণ করে খেলতে পারি, সেই চিন্তা-ভাবনা নিয়ে এগোনো উচিত আমাদের।’
কিংবদন্তি অ্যালন ডোনাল্ডের থেকে এই মাঠ ভালো কারো চেনার কথা নয়। মাত্র ৭ টেস্টে ৪০ উইকেট নিয়ে সাদা বিদ্যুৎ খ্যাত ডোনাল্ড এখনো ঐতিহাসিক মাঠের রাজা। গতকাল অনুশীলনের আগেই মাঠের কন্ডিশন, উইকেট সম্পর্কে খেলোয়াড়দের সতর্ক করে দিয়েছেন। সেসব নিয়ে আলাদা করে আলোচনার করে মানিয়ে নেওয়ার কথা জানালেন বাংলাদেশের দলপতি।
তার কণ্ঠে ছিল ইতিবাচক সুর, ‘একেক জায়গায় একেক রকম পরিস্থিতিতে পড়তেই পারেন। এটা ক্রিকেটে নয় শুধু, সবক্ষেত্রেই হয়। এটার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েই খেলতে হবে। একেক সময় একেক কন্ডিশন থাকবে, ইংল্যান্ডে একরকম থাকে, নিউ জিল্যান্ডে একরকম, সাউথ আফ্রিকায় ভিন্ন। আসলে মানিয়ে নিয়ে খেলাটা হলো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমার কাছে মনে হয়, সবাই মানিয়ে নিয়ে খেলবে। আমরা ওভাবেই মানসিক প্রস্তুতি নিয়েছি।’
মুমিনুল ও বাংলাদেশের জন্য স্বস্তির খবর পেটের পীড়ায় প্রথম টেস্টে অনুপস্থিত থাকা তামিম পোর্ট এলিজাবেথে ফিরছেন। সাদমানের জায়গায় তাকে নিয়ে মাঠে নামতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তবে পেসার তাসকিনের জায়গায় কে খেলবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। বাংলাদেশ দুই স্পিনার নিয়ে খেলবে নাকি এক স্পিনার নিয়ে খেলবে তা আজ উইকেট দেখে সিদ্ধান্ত নেবে।
যদি এক স্পিনার নিয়ে খেলে, তাহলে ইবাদত ও খালেদের সঙ্গে একাদশে ঢুকবেন রাহী। যদি দুই স্পিনার নিয়ে খেলে মিরাজের সঙ্গী হবেন তাইজুল।
‘উইকেট যতটুকু দেখলাম, আমার মনে হয়েছে একটু শুষ্ক। আর আগে কী হয়েছিল না হয়েছিল, এগুলো নিয়ে ভাবা একটু কঠিন। হয়তো এখন ভিন্ন রকম হতে পারে। কাল সকালে আবার দেখে আমরা সিদ্ধান্ত নেব, একটা স্পিনার বেশি খেলবে না একটা পেসার বেশি খেলবে।’ – বলেছেন মুমিনুল।
দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবালের সঙ্গে সুর মিলিয়ে টেস্ট অধিনায়ক মুমিনুল হকও জয়ের অভিযানের কথা বলেছিলেন। তামিম ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে এবারের সফরকে রঙিন করে তুলেছেন। টেস্ট অধিনায়ক কি পারবেন শেষটা রাঙাতে? শেষটা ভালো হলে এই সফর হয়ে উঠবে আরো চাকচিক্যময়, আরো ঐশ্বর্যমন্ডিত।
দৈনিক কলম কথা সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।